চাঙমা দাগ কধা (পিডিএফ)

মুখবন্ধ:
চাঙমা লোকসাহিত্যের সমৃদ্ধ একটি শাখা হলো প্রবাদ প্রবচন, যা চাকমা লোকসমাজে 'দাগ কধা' নামে অধিক পরিচিত। সমাজের নানা অসংগতি, উপদেশ, প্রেম, প্রতিবাদসহ নানা মানসিক অনুভূতি প্রকাশের জন্যে সহসা ছন্দে ছন্দে যে বাক্য প্রয়োগ করা হয়, তা-ই যুগে যুগে প্রবাদ প্রবচন হিসেবে পরিচিত। মানুষের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতালদ চিরায়ত জ্ঞান ও নানা ঘটনাপ্রবাহকে ঘিরে যে অর্থবোধক উক্তি, উপদেশ, ইঙ্গিত আর ব্যঙ্গ সমাজে প্রচলিত রয়েছে, তা-ই প্রবাদ প্রবচন। জুমিয়া চাকমা সমাজে প্রচলিত 'দাগ কথাগুলোর বেশির ভাগই মানুষের প্রতি উপদেশমূলক উক্তি। কেউ যদি অন্যের বুদ্ধিমাফিক কাজ করার কারণে বিপদে পড়ে অথবা নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে কোন কাজ না করে, তখন বয়স্কজনরা বলেন- 'আমন বুদ্ধি লই তরে, পরর বুদ্ধি লই মরে'। অর্থাৎ আপন বুদ্ধিতেই মানুষ কার্যসিদ্ধি করতে পারে। পরের বৃদ্ধিতে চললে কোন উদ্দেশ্যই সফল হয় না। অথবা কেউ কেউ এ ক্ষেত্রে উপদেশ দেন- 'লাদা অউক পাদা অউক ভাত্তুন পারা ন অয়, পরেয়্যা মারে মা দাগিলেও আমন মা পারা ন অয়'। পৃথিবী উপাদেয় খাদ্য যাই থাক তার কাজে ভাতের মতো হয় না। পরের মা যতই ভালো হোক নিজের মায়ের মতো হয় না। কেউ সীমা অতিক্রম করলে চাকমা বয়স্করা পরামর্শমূলক কথা বলেন- 'ইক্ক হলে কারাহ্ কারি, দিবা হলে আরাআরি, তিন্ন হলে আঘাআঘি'। যে কোন কিছুই পরিমিত হলেই সকলের কাছে সমাদৃত হয়। পরিমাণের চেয়ে একটু বেশি হলে কার চেয়ে কে একটু বেশি নেবে, তা নিয়ে কাড়াকাড়ি হয়। যদি প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি হয় তাহলে অবশ্যই বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কেউ যদি কাজের চেয়ে বেশি কথা বলে, তখন তাকে ইঙ্গিত করে বলা হয়- 'মুঅ গুণে বেঙ মরে। অর্থাৎ মুখের দোষেই ব্যাঙ মরে। যার সমরূপ বাংলা প্রবাদ অনেকটা আপনা মাংসে হরিণা বৈরি। বিপরীতে 'বোবার শত্রু নেই'ও বলা যেতে পারে। আদিবাসী সমাজে সাধারণত মজবুত কোন ভবিষ্যত পরিকল্পনা দেখা যায় না। যখন বিপদটা একেবারে সামনে এসে পড়বে, তখনই পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন একসাথে করতে হয়। তাই আগে থেকে কোন কিছু প্রস্তুত না থাকলে বুড়োরা বলেন- 'এত্য এলে তে গাছ তগাতগি'। জংলি হাতি আসার আগে গ্রামের কোন প্রস্তুতি নেই। যেই না হাতিটা এসে হামলা শুরু করবে। তখনই উঁচু গাছ সন্ধানে হুড়োহুড়ি লেগে যায়।

এই যে সহজ সাবলীল এবং গণমানুষের মুখের ভাষায় নিত্য প্রয়োজনীয় বাণী, তা একমাত্র নিঃসৃত হতে পারে প্রবাদ প্রবচনের মধ্য দিয়ে। চাঙমা একাডেমি দীর্ঘদিন ধরে চাঙমা ভাষা ও সংস্কৃতি বিকশিত করার লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে আসছে। মাতৃভাষাভিত্তিক বহুতাধিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জাবারাং কল্যাণ সমিতি ও চাঙমা একাডেমি কিছু কিছু ক্ষেত্রে একসাথে কাজ করতে শুরু করে। ভাষা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে চাঙমানের সমৃদ্ধ এই লোকসাহিত্যের শাখা "দাগ কধা'র অভাব অনুভূত হওয়ায় গত বছরের শেষের দিকে ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ সহায়তায় এই দুই সংস্থা একসাথে কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রাথমিকভাবে আমরা চাঙমা অভিধান, চাঙমা প্রবাদ প্রবচন ও চাওয়া ছড়া সংকলন দিয়ে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছি। ভবিষ্যতে অর্থসংস্থান করা সম্ভব হলে মারমা ও ত্রিপুরা ভাষায়ও অনুরূপ প্রকাশনা বের করার আকাঙ্খা মনে থেকে গেল। এই প্রকাশনাটি বের করার ক্ষেত্রে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তাঁদের সকলকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।

মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা
নির্বাহী পরিচালক,
জাবারাং কল্যাণ সমিতি


চাঙমা দাগ কধা
ভাষা: বাংলা ও চাকমা
আকার: 3 MB
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post