চাকমা জাতির ইতিহাসে যে দুইজন নারী শাসকের উল্লেখ পাওয়া যায়, তার মধ্যে মহীয়সী কালিন্দী রাণী সর্বাধিক পরিচিত। তিনি তার মহিমা এবং গরিমা দিয়ে এতটা দীপ্তিমান যে চাকমা শাসনের অনেক রাজ পুরুষকেও তাঁর দীপ্তে ম্লান লাগে।
রাণী কালিন্দী ১৮৩৭ থেকে ১৮৭২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ তিন দশক চাকমা রাজ্যে শাসন করেন । রাজ্যে ক্ষমতা গ্রহণের আগে এবং পরে শত্রুর বিরুদ্ধে কখনো তাঁকে শ্বসস্ত্র সংগ্রাম লড়তে না হলেও দীর্ঘ সময় তাঁকে বুদ্ধির লড়াই ও আইনী লড়াই দুটোই লড়তে হয়েছে শত্রুর বিরুদ্ধে। তিনি সুকৌশলে যেমন রাজ্যে সামলেছেন তেমনি অতি দক্ষতার সাথে সামলেছেন রাজ্যের সকল প্রজার চাহিদা, ইচ্ছাকে। তাই তিনি ছিলেন প্রজাবন্ধব একজন শাসক। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ইত্যাদি এগারটি আদি জনগোষ্ঠী ছাড়াও মসলিন, হিন্দু ও বড়ুয়া বাঙালিও তাঁর রাজ্যের প্রজা ছিলো। সব প্রজাকে তিনি সমান চোখে দেখতেন এবং সব ধর্মের প্রতি ছিলো তার সমান শ্রদ্ধা। প্রজা সাধারণের ধর্ম উন্নয়নে তিনি মন্দির, মসজিদ ও প্যাগডা নির্মাণ করে দিয়ে ছিলেন। তাই সব প্রজার কাছে তিনি জনপ্রিয় ও পছন্দের শাসক ছিলেন। কিন্তু এই মহিয়সী রাণীর জন্ম অতি সাধারণ এক জুম্মো পরিবারে।
ঐহাসিকদের মতে বর্তমান রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা কুতুকছড়ির একটি পাহাড়ী গ্রামে সাধারণ জুমিয়া পরিবার গুজং চাকমার ঘরে আনুমানিক ১৮০৭/১৮০৮ সালে জন্ম গ্রহণ করেন কালাবি । গুজং চাকমা গ্রামে গুজং বুজ্যা নামে পরিচিত ছিলেন। কালাবির শিশু বয়সে গায়ের রং ময়লা ছিলো বলে তাঁর নাম রাখা হয় কালাবি। কিন্তু কালাবি বয়স বাড়ার সাথে সাথে সে রুপসী হতে থাকে । গুজং চাকমার ঘরে কালাবী ছিলেন পরিবারের প্রথম সন্তান। কালাবী জন্মের অনেক বছর পর ছোট ভাই জয় মনির জন্ম হয়।
কিছু দূরে পাহাড়ে ছিল গুজং চাকমার জুম। বালিকা হালিবি জুমের কাজ বাবা মাকে সাহায্য করতো। লাকরী ও তরী তরকারির জন্য লতা পাতা সংগ্রহ করতো পাহাড় থেকে। শোনা যায় একদিন বাবার সাথে পাহাড় থেকে পাহাড়ী,শাক সবজী সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা বাপ মেয়ে দুষ্পাপ্য ঘিলা ফুল দেখতে পান। খুশিতে মেয়ে-বাবা দুহাতে যতটা সম্ভব ঘিলা ফুল কুড়িয়ে নিলেন।
পাড়ার কাছাকাছি এসে গুজং আর কালাবি দেখতে পেলেন তার হাতের ফুল কোথাও পরে গেছে। এরপর গুজং বুজ্যা ও কালাবী অনেক খুঁজাখুঁজি করেও ঘিলা ফুলের লতাটি আর খুঁজে পেলেন না। পাড়ায় এসে ঘিলা ফুল দেখার গল্প বলাতে পাড়ার লোকেরা অনেকেই তা বিশ্বাস করলো না। কারণ চাকমারা বিশ্বাস করে ঘিলা ফুল দর্শন খুব সৌভাগ্যের লক্ষণ। যে লোক ঘিলে ফুল দেখতে পায় সে রাজা না হলেও অতি প্রসিদ্ধ ধনীলোক হয়ে উঠে। গুজং আর তার মেয়ের ঘিলেফুল দেখার কথা শুনে এক অতি প্রবীণ বৈদ্য গুজং এর সাথে দেখা করে বললেন, তোমাদের কথা যদি সত্যি হয়, তবে গুজং তুমি একদিন বড় লোক হবে আর কালাবীর খুব বড় ঘরে বিয়ে হবে। গ্রামের লোকজন যেমন তাদের কথা বিশ্বাস করেনি, গুজং চাকমাও প্রবীণ বদ্যের কথা বিশ্বাস করলেননা সেদিন। কিন্তু বছর না ঘুরতেই সত্যি সত্যি গুজং বুজ্যার ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেল।
চাকমা রাজা জব্বর খাঁ ১৮১১ সনে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে আততায়ীর হাতে যখন মৃত্যু হয়, সেই সময় রাজপুত্র ধরম বক্স খা তখন নাবালক। বয়স মাত্র এগার বছর। ১৮১২ সনে রাজ ধরম বক্স খাঁ ১২ বছর বয়সে চাকমা রাজ সিংহাসনের অধিকারী হয়। অল্প বয়সে তিনি রাজকর্মে খুব দক্ষতার পরিচয় দেন। ইংরেজ সরকারও তার উপর খুব সন্তুষ্ট ছিলো।
কিশোর রাজা ধরম বক্স খাঁ এক সময় কিশোর বশস থেকে যৌবনে পা দিলেন। সদ্য যুবা রাজার শিকার করার প্রতি খুব ঝোঁক ছিল। মাঝেমধ্যে তিনি হাতির পিঠে চড়ে শিকারে বের হতেন। এমনি একদিন রাজা ধরম বক্স খাঁ মানিকছড়ি, সাপছড়ি পাড় হয়ে কুতুকছড়ি জঙ্গলে শিকার করতে গেলেন। শিকারের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। তাঁর অধীনস্থরা যখন রাত্রের জন্যে তাবু স্থাপনে ব্যবস্থা করছিল, তখন রাজা এক পাহাড়ি ঝর্ণার কাছে ক্লান্তিতে এক গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে গেলেন।
হঠাৎ কিসের কলকাকলিতে রাজার ঘুম ভেঙ্গে গেল। কিছুটা ঘুমের ঘোর কাটিয়ে রাজা দেখতে পেলেন কয়েকজন কিশোরী মেয়ে কলসী নিয়ে পানি নিতে ঝর্ণায় এসেছে। রাজা ধরম বক্স একটু এগিয়ে ঝর্ণার কাছে গেলে কিশোরী মেয়েগুলো দীর্ঘ দেহী ইংরেজী পোশাক (প্যান্ট) পড়া রাজাকে দেখে লজ্জা ও বিস্ময়ে পানি নিতে ভুলে গেল।
রাজা দেখতে পেলেন, এদের মধ্যে শুধুমাত্র একটি তেজস্বী কিশোরী বালিকা নির্ভয়ে কলসীতে পানি ভরে অন্য সকলকে নিয়ে পাড়ার দিকে হাসতে হাসতে চলে গেল। রাজা ধরম বক্মের হাতি ও তাবু ও তার দলবল দেখতে পেয়ে বুঝতে পারলো যে কোন সম্ভ্রান্ত লোক এলাকায় শিকারে এসেছে। স্বয়ং রাজার সঙ্গে যে তাদের দেখা হয়েছে তা তারা কিছুতেই বুঝতে পারেনি।
রাজার মনে হল ঐ মেয়েটি যেন অন্যদের থেকে আলাদা। তার হেটে যাওয়ার মধ্যে এক প্রকার ব্যক্তিত্ব এবং তেজ আছে। এমন ব্যক্তিত্ব, তেজ সাধারণত রাজ বংশীদের থাকে। রাজা ধরম বক্স খা সেই কিশোরী বালিকার খোঁজ নিলেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন মেয়েটি গুজং চাকমার নামে এক দরিদ্র জুমিয়ার মেয়ে কালাবী।
শিকার থেকে ফিরার সময় কিশোর রাজা ধরম বক্স কালাবিদের বাসায় উঠলেন। বাড়ীতে তখন কালাবী একা। তার বাবা-মা ও ছোট ভাই জয় মুনি জুমের কাজে গেছেন। কালাবী ঘরের বারান্দায় এলে রাজা একটু খাবার পানি চাইলেন। রাজা এর মধ্যে বাড়ীর চানা ঘরে উঠে পানি পানের সময় কালাবীর পরিবার, তাদের জুম ক্ষেত এবং তাদের পাড়ার কথা জিজ্ঞেস করলেন। কালাবী খুব নির্ভয়ে ও সাবলীল ভাবে রাজার সব উত্তর দিলেন। কালাবিকে খুব বুদ্ধিমতি মনে হল রাজার। তাঁর অমায়িক ব্যবহার আর রুপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ রাজা মোহাচ্ছন্ন হয়ে নগরে ফিরে আসলেন।
সেদিন সন্ধ্যায় মা-বাবা ঘরে ফিরে এলে কালাবী মা-বাবাকে সব কথা খুলে বললেন। তাদের গ্রামের কাছে রাজা শিকারে আসার কথা সবাই জানে। গুজং বুঝতে পারলেন এই দীর্ঘ দেহী সাহেবী পোশাক পড়া লোকটি আর কেউ নয় স্বয়ং চাকমা রাজা ধরম বক্স খাঁ। সেই সাথে গুজং কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। কারণ চাকমাদের প্রচলিত বিশ্বাস, প্রজাগণ রাজবাড়ীতে যেতে পারলে ও রাজা কখনও সাধারণ প্রজা ঘরে যেতে পারেন না। চাকমাদের বিশ্বাস, রাজা সাধারন প্রজার ঘরে গেলে “রাজা ফি” অমংগল অর্থাৎ খারাপ কিছু হওয়ার ঈঙ্গিত বহন করে। অবশ্য আমত্য ও সম্ভ্রান্তদের (দেওয়ান, তালুকদার, খীসা, কারবারী) বাড়ীতে যেতে পারেন।
কুদুক ছড়ি থেকে ফিরার পর রাজা ধরম বক্সের মনমরা অবস্থা সবাই লক্ষ্য করলো। কেমন অস্থির আর উদাস হয়ে থাকেন সব সময়। রাজার এ অবস্থা দেখে রাজমাতা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। আমত্যদের কাছে রাজমাতা জানতে পারেন, রাজা শিকারে গিয়ে কোন কিশোরীকে দেখার পর থেকে এমন হয়েছে।
রাজপরিবারে সদস্যরা রাজাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়ার জন্য এরই মধ্যে সম্ভ্রান্ত দেওয়ান পরিবারের মেয়ে খুঁজতে লাগলেন। কিন্তু রাজা ধরম বক্স খাঁ কিছুতে কালাবীকে মন থেকে মুচে ফেলতে পারলেন না। রাজা সপ্ন দেখলেন ভগবান তাকে কালাবীকে রাণী হিসেবে বরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাজা মন স্থির করলেন, কালাবীকেই বিয়ে করেই রাণী বানাবেন। রাজা তার ইচ্ছার কথা রাজমাতাকে প্রকাশ করলেন।
রাজার ইচ্ছার কথা শুনে রাজমাতার মুখ কালো হয়ে গেল। নাম,পদবিহীন একজন সাধারণত জুমিয়ার মেয়েকে কিভাবে রাজ বধু করা সম্ভব। মান সম্মান বুঝি ধূলোই মিশে গেল। রাজা মাতা রাজ আমত্যদের ডেকে শলাপরামর্শ করলেন, কি করা যায়। শেষে একটি উপায় বের করা হল।
এর কিছুদিন পরই গুজং বুজ্যার রাজবাড়িতে ডাক পড়ল। রাজবাড়ি থেকে ডাক পেয়ে গুজং বিস্মিত হল, ভয়ও পেয়ে গেল। ভয় আর উৎকন্ঠা নিয়ে গুজং রাজা নগর গেল। কিন্তু সে জানতো না সেখানে তার জন্য আরও বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছিলো। রাজা নগর যাওয়ার পর রাজা স্বয়ং তাকে দেওয়ান উপাধি দিলেন। সেই সাথে অনেক জমি আর পাহাড়ের মালিকানা। এসব হঠাৎ করে কেন তাকে দেওয়া হচ্ছে তা তাকে বলা না হলেও; এ সমস্ত যে তাঁর রূপবতী কন্যা কালাবির জন্য তা বিস্মিত গুজং অনুমান করতে পারলেন। সাধারণ জুমিয়া থেকে হঠাৎ করে সে হয়ে গেল সম্মানি দেওয়ান।
এরই মধ্যে কুতুকছড়ি গুজং চাকমাকে দেওয়ান পদবী দেওয়া ও তার ঘরে রাজা ধরম বক্স খাঁর পদার্পণ নিয়ে পাড়ায় নানান গল্প গুঞ্জনের সৃষ্টি হলো।
অভিলম্বে গুজং চাক্মার বাড়িতেই রাজার লোক পাঠানো হলো। তারা সবিনয়ে রাজার জন্য কালাবীকে বিয়ে দেওয়ার জন্য অনুমতি প্রার্থণা করলো। নিদিষ্ট শুভদিনে চাকমা ঐতিহ্য অনুযায়ী মহা ধুম-ধামে রাজার সাথে কালাবীর বিয়ে দেয়া হলো। রাজা নগর থেকে হাতির পিঠে করে বর যাত্রী কুতুকছড়ি গেল। কুতুকছড়ি সব অবিবাহিত কিশোরী মেয়ে কালাবীকে দিতে রাজানগরে গেল। রাজানগরে রাজার বিয়ে উপলক্ষে ২/৩ দিন মেলা বসলো। কুতুকছড়ি কালাবীর রাণী হয়ে নাম রাখা হলো কালিন্দী। অনুমান করা হয় বিয়ের সময় কালিন্দীর বয়স ছিলো ১৩ বছর।
রাণী কালিন্দীর প্রথম জীবন ইতিহাস থেকে অনুমান করা যায়-রাজা ধরম বক্স খাঁ ও রাণী কালিন্দী বিয়ে হয় ১৮১৯ কিংবা ১৮২০ সালে। ৪/৫ বছরের মধ্যে রাণী কালিন্দীর গর্ভে কোন সন্তান না হওয়ায় রাজা ধরম বক্স দ্বিতীয় বার জ্ঞাতী ভগিনি আটকবিকে বিয়ে করেন এবং তার গর্ভে ও কোন সন্তান না হওয়ায় রাজা তৃতীয় বার ‘কুরাকুত্ত্যা’ গজার লৌলত খাঁর কন্যা হাবিবিকে বিয়ে করেন। রাজা তিন রাণীর সঙ্গে ঘর করলেও রাণী কালিন্দীর প্রতি তার ভালোবাসার কোন কমতি ছিলো না। রাণী কালিন্দী সব সময় বড়রাণীর দায়িত্ব পালন করতেন এবং রাজার সুখ সাচ্ছন্দের প্রতি দৃষ্টি রাখতেন। অবশেষে কনিষ্ঠ রাণী হাবিবির গর্ভে এক কন্যা জন্ম গ্রহণ করে। তার নাম রাখা হয়েছিল মেনকা ওরফে চিগনবী। তার কয়েক বছর পর রাজা ধরম বক্স খাঁ মাত্র ৩২ বছর বয়সে ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে ১৮৩২ সালে পরলোক গমন করেন।
ধরম বক্স খাঁর মৃত্যুর পর রাজ্যে গোলযোগ দেখা দেয়। এই অবস্থায় ইংরেজ সরকার একমাত্র অবিবাহিত রাজ কন্যার চিগনবীর অভিভাবক হিসেবে কনিষ্ঠ রাণী হাবিবিকে চাকমা রাজ সিংহাসনে নিযুক্ত করেন। কিন্তু বড় রাণী হিসেবে রাণী কালাবির সিংহাসনে নিযুক্ত হওয়ার কথা ছিলো। তাই তিনি এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। এমতাবস্তায় ইংরেজ সরকার ১৮৩৫ সালে শুকলাল খাঁকে পার্বত্য প্রদেশের সরবরাহকারিত্ব প্রদান করেন। চট্টগ্রামে জমিদারী ভার সীতাকুন্ড থানার কাটগরবাসী আমানত আলীকে নিযুক্ত করেন।
অনেক আইনী লড়াইয়ের পর ১৯৪৪ সালে ইংরেজ সরকার রাণী কালিন্দীকে মৃত স্বামীর যাবতীয় সম্পত্তির উত্তরাধীকারী হিসাবে রাজ্যের সরবরাহকারিনী (Supplyer) হিসেবে সাব্যস্ত করেন।যদিও তিনি ১৯৩৭ সালে তিনি খাজনা ইজারা গ্রহন করে ছিলেন। বিশেষ করে চট্টগ্রামে দায়িত্ব প্রাপ্ত আনানত আলীর অসততায় বিরক্ত হয়ে ইংরেজ সরকার সকল দায়িত্ব রাণী হাতে ন্যস্ত করতে বাধ্য হয়।
কিন্তু দীর্ঘদিন মামলা মোকদ্দমা চলা এবং রাজ শাসন প্রত্যক্ষভাবে কোন রাজ পরিবারের হাতে না থাকায় রাজ্যের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ৫ বছর রাজপরিবারের বাইরের লোকের হাতে ভারপ্রাপ্ত রাজ্যের ক্ষমতা থাকার কারণে রাজ্যের স্বাভাবিক ভারসাম্য ধ্বসে পড়েছিল। রাজকোষ ছিলো দৈন্যদশা। চাকমা জাতির এক সংকটময় সময়ে রাণী কালিন্দী রাজ্যভার গ্রহন করেন।
চাকমা রাজ সিংহাসনে দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়ে রাণী কালিন্দী কনিষ্ঠ রাণী হাবিবিকে সকল কর্মের জন্য ক্ষমা করে দিয়ে জামাতা ও কন্যা চিগনবীসহ সকলকে রাজ বাড়ীতে নিয়ে আছেন। কালিন্দী রাণী ক্ষমতা গ্রহণের আগেই কনিষ্ঠ রাণী হাবিবি তাঁর মতামত ছাড়াই ধরম বক্স খাঁ এর একমাত্র কন্যা চিগোনবিকে চাকমা বীরপুরুষ রণু খাঁ প্রপৌত্র গোপীনাথ দেওয়ানের সাথে বিবাহ দেন এবং রাজানগরের নিকটবর্তী সোনায়সুরী গ্রামে পৃথক বাড়ী নির্মাণ করে কন্যার জামাতাসহ পৃথকভাবে বসবাস করতে করছিলো।
চিগোনবির পুত্র হরিশ্চন্দ্রকে তিনি চাকমা রাজ্যের পরবর্তী উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন। শেষ বয়সে রাজ্যভার দেওয়ার আগে হরিশ্চন্দ্রকে শিক্ষা য়-দীক্ষায়,অস্ত্র বিদ্যায়, রাজকীয় আদক কায়দায় প্রস্তুত করে নিয়েছিলেন।
চাকমা রাজ্যের পরবর্তী শাসক হিসেবে হরিশ চন্দ্র বর্বর কুকিদের কঠোর হস্তে দমন করে তার যোগ্যতা দেখিয়েছেন। তাঁর এমন সাহসিকতা আর বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ইংরেজ সরকার হরিশ চন্দ্রকে সম্মানজনক রায় উপাধি প্রদান করে। সেই সাথে তাঁকে দেড় হাজার টাকার ঘড়ি আর একটি স্বর্ণের চেইন প্রদান করা হয়। রাণী কালিন্দীর সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও অনুরাগী ছিলেন। তিনি রাজানগরে জলাশয়ের পশ্চিম পাড়ে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সাথে হিন্দু মন্দির ও বৌদ্ধ মন্দিরও স্থাপন করেন।
রাণী অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়েছেন, গর্ভাবস্তায় তাঁর সন্তানের মৃত্যু হয়। শেষ জীবনে ‘কর্মফল’ সম্পর্কে চিন্তা করতে করতে বৌদ্দধর্মের প্রতি অনুরাগী হন। কালিন্দিী তাঁর রাজত্ব কালে চট্টগ্রাম জেলার থেরবাদী অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৌদ্ধ ভিক্ষু সারমেধ মহাস্থবির ও অন্যান্য ভিক্ষুদের ১৮৫৬ সালে রাজানগরে আমন্ত্রণ করে চাকমা, মারমা ও বড়ুয়াদের মধ্যে বৌদ্ধধর্ম প্রতিষ্ঠা এবং সম্প্রসারণের চেষ্টা করেন। রাণী কালিন্দী আরাকানের মহামনি মন্দিরের অনুকরণে রাজানগরে মহামনি মন্দির স্থাপন করেন। এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে তিনি একমাস ব্যাপী বৈশাখী বৌদ্ধ মেলার প্রচলন করেন। এস ব্যাপী এই মেলায় পুঁটি পাঠের আসর বসতো। আসর হতো কবি গানের। দোশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কবিতা শিল্পী এই মেলায় আসতো। এই মেলায় হতো সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক মিলন মেলা। তাঁর একান্ত ইচ্ছায় ব্রহ্ম ভাষায় ‘যাদুত্তোয়াং’ নামক বইয়ের বাংলায় অনুবাদ করান এবং এই বইয়ের নাম করা হয় বৌদ্ধ রঞ্জিকা।
রাণী কালিন্দী বহু শতগুনের অধিকারী, সাহসী ও বুদ্ধিমতি ছিলেন। বিবাহের পর ও তিনি লেখাপড়ার চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। নিজে অল্প শিক্ষিত হলেও চাকমা রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ হরিশচন্দ্রকে যথাথত শিক্ষায় শিক্ষিত করার ব্যবস্থা করেন। সামাজিক, জাতিগত এবং ধর্মীয় কর্মকান্ডে রাণী কালিন্দী অত্যন্ত উদার এবং মহৎ ছিলেন।
১৮৩২ সালে তাঁর স্বামী ধরম বক্স খা যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন রাণী কালিন্দির বয়স ছিলো ২৩/২৪।এই অল্প বয়সে রাণী কালিন্দীকে শুধ তাঁর বিরোধীদের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে সংগ্রাম করতে হয়নি,তাঁকে নিজ দাবীর পক্ষে চাকমা সমাজে ক্ষমতাশালী দেওয়ানদের নিজ পক্ষে রাখতে বুদ্ধি এবং মেধার শ্রম দিতে হয়েছে যথেষ্ট । রাণী কালিন্দী অনেক বুদ্ধি আর সাহসের সঙ্গে সকল বাধা বিপত্তি মোকাবেলা করেছেন। এবং আজীবন তাঁকে নিজ অধিকার রক্ষার জন্য ঘরে বাইরে সংগ্রাম করতে হয়েছে। ক সময় যে সমস্ত রাজন্যবর্গ তাঁকে ক্ষমতা পেতে বাধা দিয়ে ছিল এবং অন্যদিকে প্রতিহিংসা পরায়ন চতুর ও ধূর্ত ইংরেজ শাসক গোষ্ঠী।
১৭৭৬ থেকে ১৭৮৭ সালের মধ্যে ভিন্ন নেতৃতে স্বাধীন চাকমাদের সাথে ইংরেজদের চারবার যুদ্ধ হয়। যা কার্পাস বিদ্রোহ নামে পরিচিত। এই চারবার যুদ্ধে চারবারই পৃথিবীর সবচেয়ে পরাক্রমশালী ইংরেজ সৈন্য বাহিনী চাকমাদের কাছে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়। এই যুদ্ধ হয়েছিল শের দোলত খাঁ সময় হতে তার পুত্র রাজা জান বক্স খাঁ এর সময়ে সেনাপতি রিনু খাঁর নেতৃত্বে । যুদ্ধে ও কৌশলে কোন ভাবেই চাকমাদের সাথে পেরে না উঠে ইংরেজ সরকার শেষে চাকমা রাজা জানবক্স খাঁ এর সাথে ১৭৮৭ সালে শান্তিচুক্তি করতে বাধ্য হয়। যা ঐতিহাসিক ভাবে কার্পাস চুক্তি নামে পরিচিত। কিন্তু এই চুক্তির নেপথ্যে ছিলো চতুর ইংরেজ গূঢ় দুরভিসন্ধি। অসৎ উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে সেনাপতি রুনু খাঁ সে চুক্তি কোন দিনই মানতে পারেননি। এক সময় সেনাপতি রুনু খাঁর সন্দেহ সত্য হয়। চুক্তি মোতাবেক চাকমারা তাদের শর্ত মেনে নিলেও প্রবঞ্চক ইংরেজরা নিজেদের শর্ত কখনও পুরাপুরি বাস্তবায়ন করেনি। বরং প্রতি পদে পদে তারা চাকমাদের বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
চারবার শোচনীয় পরাজয়ের গ্লানির প্রতিশোধ নিয়েছেন তারা নানা ভাবে কৌশলে। পালিয়ে থাকা সেনাপতি রুনু খাঁকেও আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে। ইংরেজদের আগ্রাসী নীতির কারণে চাকমাগণ ক্রমে ক্রমে চাকমা রাজ্যের সমতলভূমি (রাঙ্গুনীয়া, রাউজান ও ফটিকছড়ি) থেকে উচ্ছেদ হয়ে পার্বত্য অঞ্চলে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে।
ইংরেজদের সাথে ছায়া দ্বন্ধ ঘুচাতে রাণী কালিন্দী ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় তিনি বহু বিদ্রোহী সিপাহীকে বন্দী করে ইংরেজ সরকারের কাছে সমর্পণ করেছেন। তথাপি তিনি স্থানীয় ইংরেজ কর্মকর্তাদের মন লাভে ব্যর্থ হয়েছেন। পরে রাণী কালিন্দি বুঝতে পেরেছেন এই জাতি খুবই জাত্যভিমানি। তাদের আত্মশ্লাঘায় আঘাত লাগলে তারা কখনো ভুলেনা। তার প্রতিশোধ তারা যেভাবেই হোক নেবে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন চাকমাদের মত ক্ষুদ্র জাতির কাছে শোচনীয় পরাজয়ে তাদের আত্মশ্লাঘায় এতটা লেগেছে যে যা তারা কখনো ভুলনি ।
রাণী কালিন্দী বাধ্য হয়ে মানতে হলেও ইংজেরদের আদিপত্যকে কখনো মন থেকে মানতে পারেনি তিনি । তিনি সব সময় ইংরেজদের সাথে প্রত্যক্ষ সাক্ষাৎ এড়িয়ে চলতেন। শের দৌলত খাঁ সময় থেকে ইংরেজ সরকারের সাথে চাকমাদের যে দ্বন্ধ সূচনা হয়েছিলো তা জানবক্স খাঁ এর সময় অবসান হলেও সেই দ্বন্দের অভিশপ্ত প্রেতাত্মার উপস্থিতি রাণী কালিন্দীর ঠিকই উপলব্ধি করতে পেরেছিলো । এই দ্বন্দ্ব রাকমা রাজ্যের সাথে আরও গাঢ়তর হয় ১৮৬৬ সালে (H.T LEWIN) এইচ.টি. লুইন এর সুপারিটেনডেন্ট নিয়োগের পর।
ক্যাপ্টেন লুইন দায়িত্ব গ্রহণের পর ১৮৬৯ সালের ১লা জানুয়ারী চন্দ্রঘোনা হতে রাঙ্গামাটিতে প্রশাসনিক হেডকোয়াটারকে স্থানান্তর করেন। ক্যাপ্টেন লুইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল চট্টগ্রাম হিলট্রাক নতুন জেলাটিকে বৃটিশের স্থায়ী অধিকার ও প্রাধান্য বিস্তার করা। অপরদিকে রাণী কালিন্দী ছিলেন এর ঘোর বিরোধী। কাজেই অচিরেই ঝানু কূটকৌশলী লুইনের সাথে তেজস্বিনী রাজমহীয়সী রাণী কালিন্দীর বিরোধ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ক্যাপ্টেন লুইনের সঙ্গে রাণীর সম্পর্ক এত খারাপ ছিল যে একবার রাণীর সাথে সাক্ষাতের ইচ্ছা প্রকাশ করলে রাণী কালিন্দী পর্দানশীলতার অজুহাতে সেই প্রস্তাব গ্রহণে অসম্মতি জানায়। ক্যাপ্টেন লুইন একবার জোরপূর্বক রাণী কালিন্দীর সাথে দেখা করতে গেলে রাজবাড়ীর রক্ষী/ অনুচর বর্গের দ্বারা বাধা প্রাপ্ত হয়। রাজানগরের স্থানীয় জনগণ ক্যাপ্টেন লুইনকে ঘেরাও করে রাখে। এই ঘটনার জন্য ক্যসপ্টেন লুইন খুবই অপমানিত বোধ করেন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যের সরকারী ডেপুটি কমিশনায় অখ্যাত ক্ষুদ্র এক রাজ্যের রাণীর এমন ঔদ্ধত্যপূর্ন দাম্ভিকতা কোনভাবেই মেনে নিতে পারেন নি।
তিনি রাণীর প্রতি অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হন এবং নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে রাণীকে হয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালান। প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তার দাস/দাসীদের বিনাবেতনে কাজ করায় এই অজুহাতে তাকে বন্দি করার জন্য এক ইংরেজ অফিসারের নেতৃত্বে রাজানগরে পুলিশ প্রেরণ করেন। কিন্তু দাস/দাসীরা সকলে একবাক্যে স্ববেতনে কাজ করেন প্রকাশ করায় লুইন সেই চেষ্টা ও ব্যর্থ হয়। যখন কোনভাবে পারেননি রাণী কালিন্দীর ক্ষমতা খর্ব করার উদ্দেশ্যে কাচালং ও কর্ণফুলী অঞ্চল ঈষান চন্দ্র দেওয়ানকে এবং চেঙ্গী উপত্যকায় পূর্ববর্তী অঞ্চলে নীল দেওয়ানকে শাসনভার অর্পন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা রাজভক্ত বিধায় ক্যাপ্টেন লুইনের সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন।
১৮৬০ সালে পৃথক পার্বত্য জেলা গঠন করে সমতল অঞ্চলে (রাঙ্গুনীয়া, রাউজান ও ফটিকছড়ি) বসবাসরত সকল পাহাড়ীদের পার্বত্য অঞ্চলে আসতে বাধ্য করেন। ক্যাপ্টেন লুইনের প্ররোচনায় ইংরেজ সরকার রাণী কালিন্দীকে সতর্কপত্র দেয় যে, রাণী কালিন্দী স্থানীয় ইংরেজ কর্মকর্তাকে কাজকর্মে বারবার বাধা দান করলে তাকে রাণীর বর্তমান পদবরাহকারী’(SUPPLIER) পদ থেকে ও পদচ্যুত করা হবে। ক্যাপ্টেন লুইন তাঁকে বৃদ্ধা বিধবা নারী বাঙ্গালী কর্মচারীদের পরামর্শে চলেন বলেন অভিযোগ করেছেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন একবার মহামুনি মেলা দেখতে গেলে রাণী তাদিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। যদিও সাক্ষী প্রমাণের অভাবে তিনি কোথাও এর জন্য মামলা করেননি। কিন্তু এঘটনা তিনি কখনো ভুলে যাননি ।
রাণীর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে যখন সফল হতে পারেনি তখন তিনি চাকমা রাজ্যের অধঃপতনের সূত্রপাঠ করে যান।
১৮৭০ সালে পার্বত্য অঞ্চলে চাকমা রাজ্যকে ভেঙ্গে মং সার্কেল,বোমাং সারৃকেল ও চাকমা সার্কেল এই তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করেন। রাণী এই বিভাজনের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিল করলে ও তা নাখোজ করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতে বিধি-বিধানে বহির্ভুত রেখে পৃথক আইন পাশ করে গভর্নর/ গভর্নর জেনারেলের উপর অর্পন করা হয় । সার্কেল চীফ এর ক্ষমতা ডেপুটি কমিশনারের অধীনে রাখা হয়। সমতলভূমির রাজস্ব আদায়ের রাজকীয় স্বত্বঃ বিলোপ করা হয়। রাজাকে কেবল পাহাড়ের জায়গার অধিকার ও জুম খাজনা আদায়ের অধিকার দেওয়া হয়।
ক্যাপিটেশন (CAPITATION) ট্যাক্স আদায় রহিত করা হয়। বন শুল্ক থেকে বঞ্চিত করা হয়। চাকমা রাজ্য সীতাকুন্ড এবং ফটিকছড়ি পাহাড়ীয়া অঞ্চল হইতে পঞ্চাশ টাকা হারে পোড়া মাটি বা জুম খাজনা আদায় অধিকার ১৮৬৭ সালে বিলোপ করা হয়। কর্ণফুলি নদীর ঘাটের উপর বানিজ্য শুল্ক ও কার্পাস শুল্ক আদায়ের ক্ষমতা রহিত করা হয়।
এসমস্ত থেকে বুঝা যায় কতটা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে রাণী কালিন্দী রাজ্য শাসন করেছিলেন। শেষ জীবনে হয়তো তাঁকে পদচ্যুত করা হবে এই ভয়ে তিনি তাঁর জীবর্দশায় ১৮৭৩/৭৪ তাঁর পৌত্র হরিশ চন্দ্রকে রাজ্যভার অর্পন করেন। ইংরেজ সরকার ১৮৬৮ সালের জন্য কালিন্দীর উত্তরাধীকার হিসেবে হরিশ চন্দ্রকে মনোনিত করেন এবং তিনি মৃত্যুর আগে রাজ সিংহাসনের অধিকারী হরিশ চন্দ্রকে রাজ্যের সমস্ত দায়িত্ব অপর্ণ করেন। রাণী কালিন্দী ১৮৭৩ সালে কারো মতে ১৯৭৪ সালে সবাইকে শোকের সাগ পরলোক গমন করেন।
চাকমা রাজ শাসনে রাণী কালিন্দীর মত আর কোন শাসক ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের কাছে এতটা নিন্দিত এবং নন্দিত হননি। কারণ চাকমা জনগোষ্ঠীর বর্তমান দূর্গতির জন্য তার ভুল কূটনৈতিক অবস্থানকে দায়ী করা হয়। কূটনীতিক ভুল অবস্থানের জন্য তাঁর রাজত্বকালে ইংরেজ সরকার চাকোমাস রাজ্যোটিকে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করে চাকমা রাজার পদটি পদাবনতি করে সার্কেল চীফ করা হয়। সেই সাথে সাহসী বীর গৌরবজ্জ্বল চাকমা রাজ্যে এবং মানুষেদের বিভক্ত করে এক হতভাগ্য ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। বলা হয়, সেই সময়ই থেকে মূলত শুরু হয় চাকমা জাতির নির্মম দুর্দশার সূচনা।
তারপরও অল্প বয়সী খুব সাধারণ এক গ্রাম্য বালিকার কালাবি থেকে কালিন্দি রাণী হয়ে উঠা এবং বিয়ের পর পড়ালেখা স্বশিক্ষিত হয়ে এক সময় তেজ দীপ্ত সুশাসক হয়ে উঠা রুপ কথার গল্পের মতো বিস্ময়কর।
লেখক: নয়ন চাকমা